লিঙ্গ কাকে বলে ? লিঙ্গ পরিবর্তনের নিয়ম জেনে নিন বিস্তারিত

বাংলা গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়ে ভালো করে বোঝার জন্য লিঙ্গ কাকে বলে এবং স্ত্রী ও পুরুষবাচক শব্দগুলো ভালো করে চিহ্নিত করতে হয়। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বাংলা ব্যাকরণ এর লিঙ্গ থেকে প্রশ্ন আসে। এছাড়াও বাংলা লেখতে, পড়তে এবং বুঝতে লিঙ্গ এবং লিঙ্গ পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়।

এ আর্টিকেলে লিঙ্গ কাকে বলে এবং লিঙ্গ পরিবর্তন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

লিঙ্গ কাকে বলে
লিঙ্গ কাকে বলে 

লিঙ্গ কাকে বলে

লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন বা লক্ষণ। লিঙ্গ ইংরেজিতে বলা হয় gender । বাংলা ভাষায় এমন অনেক শব্দ আছে যেগুলো কোনোটি পুরুষ জাতীয়, কোনোটি স্ত্রী জাতীয়, কোনোটি আবার স্ত্রী-পুরুষ উভয়কেই বোঝায়। তাই যেসব চিহ্ন বা লক্ষণ দ্বারা শব্দকে পুরুষ, স্ত্রী বা অন্য জাতীয় হিসেবে আলাদা করা যায়, তাকে লিঙ্গ বলে।

লিঙ্গ কত প্রকার ও কি কি?

লিঙ্গ চার প্রকার । যথা

১. পুংলিঙ্গ বা পুরুষবাচক শব্দ

২. স্ত্রীলিঙ্গ বা স্ত্রীবাচক শব্দ

৩. উভয় লিঙ্গ বাচক শব্দ

৪. ক্লীব লিঙ্গ বা অলিঙ্গবাচক শব্দ

১. পুংলিঙ্গ বা পুরুষবাচক শব্দ কাকে বলে

যেসব চিহ্ন বা লক্ষণ দ্বারা শব্দকে পুরুষ জাতীয় হিসেবে আলাদা করা যায় সেগুলোকে পুংলিঙ্গ বা পুরুষবাচক শব্দ বলে। যেমন: বাবা, ছেলে

২. স্ত্রীলিঙ্গ বা স্ত্রীবাচক শব্দ কাকে বলে

যেসব চিহ্ন বা লক্ষণ দ্বারা শব্দকে নারী জাতীয় হিসেবে আলাদা করা যায় সেগুলোকে স্ত্রীলিঙ্গ বা স্ত্রীবাচক শব্দ বলে। যেমন: মা, মেয়ে, সুন্দরী

৩. উভয় লিঙ্গ বাচক শব্দ কাকে বলে

যেসব চিহ্ন বা লক্ষণ দ্বারা শব্দকে পুরুষ, স্ত্রী উভয় বোঝায় তাদেরকে উভয় লিঙ্গ বাচক শব্দ বলে। যেমন: শিশু, সন্তান, মানুষ, বাঙালি

৪. ক্লীব লিঙ্গ বা অলিঙ্গবাচক শব্দ কাকে বলে

যেসব চিহ্ন বা লক্ষণ দ্বারা শব্দকে পুরুষ, স্ত্রী বা অন্য জাতীয় হিসেবে আলাদা করা যায় না, তাকে ক্লীব লিঙ্গ বা অলিঙ্গবাচক শব্দ বলে। যেমন: বই, খাতা, কলম

আরো পড়তে পারেন

লিঙ্গান্তর বা লিঙ্গ পরিবর্তনের নিয়ম

পুংলিঙ্গ বা পুরুষবাচক শব্দকে ত্রীলিঙ্গ বা স্ত্রীবাচক শব্দে রূপান্তর করাকে লিঙ্গান্তর বা লিঙ্গ পরিবর্তন বলে। লিঙ্গ পরিবর্তনের কিছু সাধারণ নিয়ম আছে। যেমন :

১. পুরুষবাচক শব্দের শেষে –আ (া), –ঈ (ী), –নী, –আনি, –ইনি ইত্যাদি স্ত্রী প্রত্যয় জুড়ে পুংলিঙ্গ শব্দকে ত্রীলিঙ্গে রূপান্তর করা যায়। যেমন : প্রথম > প্রথমা, চাকর > চাকরানি, ছাত্র > ছাত্রী, জেলে > জেলেনি।

২. কখনো কখনো ভিন্ন শব্দযোগেও পুংলিঙ্গ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দে পরিবর্তন হয়। যেমন : বাবা > মা, ছেলে > মেয়ে, পুরুষ > নারী, সাহেব > বিবি, স্বামী > স্ত্রী, কর্তা > গিন্নি, ভাই > বোন, পুত্র > কন্যা, বর > কনে।

৩. শব্দের আগে পুরুষবাচক বা স্ত্রীবাচক শব্দ জুড়ে দিয়েও শব্দের লিঙ্গান্তর হয়ে থাকে। যেমন পুরুষ–মানুষ > মেয়ে–মানুষ, হুলো–বিড়াল > মেনি–বিড়াল, মদ্দা–ঘোড়া > মাদি–ঘোড়া, ব্যাটাছেলে > মেয়েছেলে, এঁড়ে–বাছুর > বকনা–বাছুর, বলদ গরু > গাই গরু।

৪. কতকগুলো পুরুষবাচক শব্দের আগে মহিলা, নারী ইত্যাদি স্ত্রীবাচক শব্দ প্রয়োগ করে শব্দের লিঙ্গান্তর হয়। যেমন কবি > মহিলা কবি, ডাক্তার > মহিলা ডাক্তার, সভ্য > নারী সভ্য, সৈন্য > নারী সৈন্য।

৫. কোনো কোনো শব্দের শেষে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে পুংলিঙ্গবাচক শব্দ ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দে পরিবর্তন হয়। যেমন : গয়লা > গয়লা বউ, বোন পো > বোন ঝি, ঠাকুর পো > ঠাকুর ঝি।

৬. কতগুলো শব্দে কেবল পুরুষ বোঝায়। যেমন: কবিরাজ, কৃতদার

৭. কতগুলো শব্দ কেবল স্ত্রী বোঝায়। যেমন: সতীন, সধবা, এয়ো

তৎসম শব্দের লিঙ্গান্তর বা লিঙ্গ পরিবর্তনের নিয়ম

তৎসম পুরুষবাচক শব্দের পরে আ, ঈ, আনী, নী, ইকা প্রভৃতি প্রত্যয়যোগে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন :

১. আ-যোগে :

ক. সাধারণ অর্থে : অনাথ-অনাথা, কল্যাণীয়-কল্যাণীয়া, বিবাহিত-বিবাহিতা, মৃত-মৃতা, মাননীয়-মাননীয়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রিয়-প্রিয়া, প্রথম-প্রথমা, চতুর-চতুরা, চপল-চপলা, নবীন-নবীনা, কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা, মলিন-মলিনা, বয়স্ক-বয়স্কা, পূজনীয়-পূজনীয়া, মহাশয়- মহাশয়া ইত্যাদি।

খ. জাতি বা শ্রেণিবাচক : অজ-অজা, কোকিল-কোকিলা, শিষ্য-শিষ্যা, ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া, শূদ্র-শূদ্রা ইত্যাদি।

২. ঈ-প্রত্যয়যোগে :

ক. সাধারণ অর্থে : নিশাচর-নিশাচরী, ভয়ংকর-ভয়ংকরী, রজক-রজকী, কিশোর-কিশোরী, সুন্দর-সুন্দরী, চতুর্দশ-চতুর্দশী, ষোড়শ-ষোড়শী ইত্যাদি।

খ. জাতি বা শ্রেণিবাচক : সিংহ-সিংহী, ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী, মানব-মানবী, বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী, কুমার-কুমারী, ময়ূর-ময়ূরী, দেব-দেবী, কপোত-কপোতী ইত্যাদি।

৩. ইনি, নী প্রত্যয়যোগে : মায়াবী-মায়াবিনী, কুহক-কুহকিনী, যোগী-যোগিনী, মেধাবী- মেধাবিনী, দুঃখী-দুঃখিনী ইত্যাদি।

০৪. ইকা-প্রত্যয়যোগে :

যেসব পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘অক্’ রয়েছে সেসব শব্দে ‘অক্’ স্থলে ‘ইকা’ হয়। যেমন : অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, বালক-বালিকা, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সেবক-সেবিকা, পাচক-পাচিকা, পাঠক-পাঠিকা, লেখক-লেখিকা ইত্যাদি। কিন্তু গণক-গণকী, নর্তক- নর্তকী, চাতক-চাতকী, রজক-রজকী, (বাংলায়) রজকিনী

খ. ক্ষুদ্রার্থে ইকা যোগ হয়। যেমন : নাটক-নাটিকা, মালা-মালিকা, গীত-গীতিকা, পুস্তক- পুস্তিকা ইত্যাদি (এগুলো স্ত্রী প্রত্যয় নয়, ক্ষুদ্ৰাৰ্থক প্রত্যয়)।

৫. আনী প্রত্যয় যোগ করে :

ইন্দ্ৰ-ইন্দ্ৰানী, মাতুল-মাতুলানী, আচার্য-আচার্যানী, (কিন্তু আচার্যের কর্মে নিয়োজিত অর্থে আচার্য)। এরূপ : শূদ্র-শূদ্রা (শূদ্র জাতীয় স্ত্রীলোক), শূদ্রানী (শূদ্রের স্ত্রী), ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া/ক্ষত্ৰিয়ানী ইত্যাদি।

৫. আনী প্রত্যয়যোগে কোনো কোনো সময় অর্থের পার্থক্য ঘটে। যেমন : অরণ্য -অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য), হিম-হিমানী (জমানো বরফ)।

৬. বতী, মতী, ঈয়সী প্রত্যয়যোগে : গুণবান-গুণবতী, ধনবান-ধনবতী, রূপবান-রূপবতী, আয়ুষ্মান-আয়ুষ্মতী, শ্রীমান-শ্রীমতি, বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, গরীয়ান-গরীয়সী, বর্ষীয়ান-বর্ষীয়সী, মহীয়ান-মহীয়সী ইত্যাদি।

নিত্য পুরুষবাচক শব্দ কাকে বলে

যেসকল শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ হয় না, এবং যে শব্দগুলো সবসময় পুরুষবাচক হয় সেগুলোকে নিত্য পুরুষবাচক শব্দ বলে।

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত নিত্য পুরুষবাচক শব্দ

ঢাকী, দলপতি, কাপুরুষ, কবিরাজ, অকৃতদার, রাষ্ট্রপতি, যোদ্ধা, কৃতদার, বিচারপতি, সেনাপতি, স্ত্রৈণ, পুরোহিত, বিপত্নীক ইত্যাদি।

নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ কাকে বলে

যেসকল শব্দের পুংলিঙ্গ হয় না, এবং যে শব্দগুলো সবসময় স্ত্রীবাচক হয় সেগুলোকে নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ বলে।

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ

এগুলোর পুরুষবাচক শব্দ নেই যেমন : সতীন, অর্ধাঙ্গী, ডাইনি, বাইজি, শাঁকচুন্নি, অনূঢ়া, বিমাতা, অঙ্গনা, কলঙ্কিনী সত্মা, এয়ো, দাই, সধবা, বিধবা, অন্তঃসত্ত্বা, সজনী, ধনি, অসূর্যম্পশ্যা, রূপসি, শাঁখিনী, অর্ধাঙ্গিনী (অর্ধাঙ্গী), কুলটা, বিধবা, সপত্নী, অসূর্যম্পশ্যা, অরক্ষণীয়া ইত্যাদি।

বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রী ও পুরুষবাচক শব্দ

ক. কতকগুলো বাংলা শব্দে পুরুষ ও স্ত্রী দুই-ই বোঝায়। যেমন : জন, পাখি, শিশু, সন্তান, শিক্ষিত, গুরু ইত্যাদি।

খ. কতকগুলো শব্দে কেবল পুরুষ বোঝায়। যেমন : রাষ্ট্রপতি, কবিরাজ, ঢাকি, কৃতদার, অকৃতদার, স্ত্রৈণ, পুরোহিত, বিপত্নীক ইত্যাদি।

গ. কিছু পুরুষবাচক শব্দের দুটো করে স্ত্রীবাচক শব্দ রয়েছে। যেমন : দেবর-ননদ (দেবরের বোন)/জা (দেবরের স্ত্রী), ভাই-বোন এবং ভাবি (ভাইয়ের স্ত্রী), শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী (পেশা অর্থে) এবং শিক্ষকপত্নী (শিক্ষকের স্ত্রী), বন্ধু-বান্ধবী (মেয়ে বন্ধু) এবং বন্ধুপত্নী (বন্ধুর স্ত্রী), দাদা-দিদি (বড় বোন) এবং বৌদি (দাদার স্ত্রী)।

ঘ. বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের বিশেষণ স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন : সুন্দর বলদ-সুন্দর গাই, সুন্দর ছেলে-সুন্দর মেয়ে, মেজ খুড়ো-মেজ খুড়ি ইত্যাদি।

ঙ. বিধেয় বিশেষণ অর্থাৎ বিশেষ্যের পরবর্তী বিশেষণও স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন : মেয়েটি পাগল হয়ে গেছে (‘পাগলি' হবে না)। আসমা ভয়ে অস্থির (‘অস্থিরাত হবে না )।

চ. কুল-উপাধিরও স্ত্রীবাচকতা রয়েছে। যেমন : ঘোষ (পুরুষ)-ঘোষজা (কন্যা অর্থে), ঘোষজায়া (পত্নী অর্থে)।

ছ. পুরুষকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে শ্রদ্ধাভাজনেষু, শ্রদ্ধাস্পদেষু, মান্যবরেষু, বন্ধুবরেষু, প্রীতিভাজনেষু, স্নেহভাজনেষু, কল্যাণীয়েষু, স্নেহাস্পদেষু প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করা হয়।

জ. মহিলাকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে শ্রদ্ধাস্পদাসু, মাননীয়াসু, সুচরিতাসু, কল্যাণীয়াসু, প্রীতিভাজনীয়াসু, স্নেহভাজনীয়াসু প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করা হয়।

ঞ. কতকগুলো শব্দকে উভয়লিঙ্গ হিসেবে ধরা হয়। যেমন: কবি, সম্পাদক।

গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ 

রাজ-রাজ্ঞী, কলু-কলুনী, তনু-তন্বী, শার্দুল-শার্দুলী, গুরু-গুর্বী, কুরঙ্গ-কুরঙ্গী, ডোম- ডোমনী, ধোপা-ধোপানি, সারমেয়- সারমেয়ী, অচল-অচলা, যশস্বী-যশস্বনী, ডাক-ডাকিনী, পসারী-পসারিণী, যবন-যবনী, হরিণ-হরিণী, খানসামা-আয়া, ছিঁচকাঁদনে-ছিঁচকাঁদুনী, লুণ্ঠিত-লুণ্ঠিতা ইত্যাদি

আমাদের শেষ কথা

আশা করি লিঙ্গ কাকে বলে ? লিঙ্গ পরিবর্তনের নিয়ম তোমার সফলতায়  অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...

 আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন