কোরবানির দোয়া ও রেফারেন্স সহকারে কোরবানির নিয়ম কানুন

‘কোরবানি’ অর্থ—নৈকট্য, সান্নিধ্য, উৎসর্গ। ঈদুল আজহার দিনগুলোতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে ‘কোরবানি’ বলা হয়। (মাজমাউল আনহুর : ২/৫১৬)।

কোরবানির নিয়ম কানুন
কোরবানির নিয়ম কানুন

কুরবানি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ ইবাদাত। প্রতি বছর সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মুসলমানরা কুরবানি করে থাকে। এর মধ্যে কুরবানির নিয়ম কানুন মাসআলা - মাসায়েল না জানার কারণে অনেক মুসলমান ভুল পন্থায় কুরবানি করে থাকে। এই কারণে এই আর্টিকেলে কোরবানির দোয়া, বিভিন্ন রেফারেন্স সহকারে কুরবানির সঠিক নিয়ম কানুন, কুরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত, কুরবানি সম্পর্কে হাদিস, কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম সহ কুরবানির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে

কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

আল্লাহ তা’য়লার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সকল শরীতেই কুরবানীর বিধান বিদ্যমান ছিল। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে – আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানী নির্ধারণ করেছি। যাতে তারা আল্লাহর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। ( সুরা হজ: ৩৪)

প্রতি বছর মুসলিমগণ ঈদুল আযহার দিনে যে কুরাবানী করে থাকে প্রকৃতপক্ষে তা নবী ইব্রাহীম (আঃ) এর আপন পুত্র কুরবানী করার স্মৃতিচারণ যার বর্ণনা সূরা সাফফাতের ১০২ - ১১১ নং আয়াতে এসেছে।

এছাড়াও কোরবানি সম্পর্কে সূরা বাকারা: আয়াত ১৯৬, সূরা মায়েদা: আয়াত-২৭, সূরা আনআম: আয়াত ১৬২-১৬৩, সূরা হজ: আয়াত ৩৬-৩৮ এ বলা হয়েছে।

কোরবানি সম্পর্কে হাদিস

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) দুইটি সাদা-কালো বর্ণের (বড় শিং বিশিষ্ট) নর দুম্বা কোরবানি করেছেন। আমি দেখেছি, তিনি দুম্বা দুটির গর্দানে পা রেখে— বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার বললেন। অতঃপর নিজ হাতে জবেহ করলেন। (বুখারি, হাদিস : ২/৮৩৪)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) ঈদগাহে জবেহ করতেন এবং নহর করতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২/৮৩৩)

শাদ্দাদ ইবনে আওছ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সবকিছুর ওপর অনুগ্রহ অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা জবাই করবে— তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই করো। প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দেবে এবং তার পশুকে শান্তি দেবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/১৫২)

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা (কোরবানিতে) ‘মুছিন্না’ ছাড়া জবেহ করবে না। তবে সংকটের অবস্থায় ছয় মাস বয়সী ভেড়া-দুম্বা জবেহ করতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/১৫৫)

বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, ‘আমাদের এই দিবসে প্রথম কাজ নামাজ আদায় করা, এরপর কোরবানি করা। সুতরাং যে এভাবে করবে— তার কাজ আমাদের তরিকা (পদ্ধতি) মতো হবে। আর যে আগেই জবেহ করেছে (তার কাজ তরিকা মতো হয়নি) অতএব তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোশত, (আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত) কোরবানি নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২/৮৩২)

অন্য হাদিসে আছে কোনো কোনো সাহাবি ভুলক্রমে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করেছিলেন। নবী করিম (সা.) তাদের পুনরায় কোরবানি করার আদেশ করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২/৮২৭)

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) তিনরাত পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর (অবকাশ দিয়ে) বলেন, ‘খাও, পাথেয় হিসাবে সঙ্গে নাও এবং সংরক্ষণ করে রাখ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/১৫৮)

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর এক বর্ণনায় আছে যে, ‘খাও, সংরক্ষণ কর এবং সদকা করো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/১৫৮)

আরো পড়তে পারেন

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব

সুস্থ বিবেকবান, প্রাপ্ত বয়স্ক, মুকীম, মুসলমান যে পুরুষ বা মহিলা পশু কুরবানীর দিনগুলোতে (১০ জিলহজ্ব সুবেহ সাদেক ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত) সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্যের (বর্তমান বাজার দর ৫২ হাজার টাকা) প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হবেন তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। স্বর্ণ-রূপা, ব্যাংক ব্যালেন্স, নগদ বা পাওনা টাকা, ব্যবসার পণ্য, নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার হচ্ছেনা এমন ঘর-বাড়ি, জমি-জমা, স্বাভাবিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাব পত্র ও পোশাক - পরিচ্ছদ নিসাবে হিসাব হবে। 

বসবাসরত ঘরবাড়ি, সংসারের খরচ মিটাতে প্রয়োজনীয় ফসলি জমি, ব্যবহারের প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র ও সাংসারিক , ঋণ প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং কুরবানীর নিসাব থেকে বাদ থাকবে। (জাওহিরুল ফিকহ ৬/২৭০)

মাসআলা: পরিবারের বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে যারা নেছাবের মালিক তাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে আলাদা কোরবানি করা ওয়াজিব। শুধু পরিবারেরে কর্তার পক্ষ থেকে কোরাবানি করা যথেষ্ঠ নয়। যার উপর ওয়াজিব তার নামেই কোরবানি করবে। অনেক সময় ছেলের উপর কুরবানী ওয়াজিব হলেও কুরবানী করা হয় বাবার নামে এটা ছহীহ নয়।

কুরবানীর পশু

শুধু গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা ছহীহ। গৃহপালিত ভেড়া, বকরি, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট ছাড়া বন্য গরু-মহিষ, পাহাড়ি বকরি, গড়াল, হরিণ ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা ছহীহ নয়। এসব বন্য বা পাহাড়ি পশুর প্রতিপালন শুরু হলেও সেগুলো দ্বারা কুরবানী ছহীহ নয়। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৩৪৩, ফতোয়ে খানিয়া ৩/৩৪৮, বাদাইয়ূস সনায়ে ৫/৫৯)

মাসআলা: কুরবানী ছহীহ হওয়ার জন্য উট ৫ বছর বয়সি ও গরু ২ বছর বয়সি হওয়া জরুরী। বকরি ও ভেড়ার জন্য সর্বাবস্থায় ১ বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক। তবে ৬/৭ মাসের দুম্বা দেখতে ১ বছর বয়সি হূষ্টপুষ্ট দুম্বার মত মনে হলে তা দিয়েও কুরবানী করা ছহীহ- এ মাসআলা ভেড়া-বকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২২, রহীমিয়া ১০/৪৭)

মাসআলা: বয়স পূর্ণ হওয়ার  ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কথা ও প্রবল ধারনা যথেষ্ঠ। অতিরিক্ত যাচাই করা জরুরী নয়।

মাসআলা: জন্মগত শিং নেই বা শিং ভেঙ্গে গেছে এমন পশু দ্বারাও কুরবানী ছহীহ। তবে পশুর শিং মূর থেকে উঠে গেলে তা দ্বারা কুরবানী ছহীহ নয়। (আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩)

মাসআলা: অতি রুগ্ন ও দুর্বল প্রাণী যা পায়ে হেটে জবেহের স্থানে যেতে পারে না তা দিয়ে কুরবানী ছহীহ নয়। এমনি ভাবে খোড়া বা লেংড়া প্রাণী যা তিন পায়ে চলে চতুর্থ পা মাটিতে মাটিতে রাখতে পারে না তা দিয়ে কুরবানী ছহীহ নয়। যদি রুগ্ন পায়ের উপর সামান্য ভর করতে পারে তা দ্বারা কুরবানী ছহীহ হবে। (তিরমিযি হাদীস নং. ১৪৯৭, আহসানুল ফাতওয়া ৭/৫০৫)

মাসআলা: পশুর কান, লেজ, দুধের বাট, দাঁত, দৃষ্টিশক্তি ইত্যাদির অধিকাংশ ত্রুটিযুক্ত হলে  তা দ্বারা কুরবানী ছহীহ নয়। (হেদায়া ৪/৪৪৭)

মাসআলা: গর্ভবতী পশুর কুরবানী জায়েয। তবে বাচ্চা হওয়ার সময় নিকটবর্তী থাকলে তা দিয়ে কুরবানী মাকরূহ। তা পরিবর্তন করে অন্যটি কুরবানী করা উচিত হবে। (ফতওয়ায়ে মাহমূদিয়া ১৭/৩১৭)

শরীকে কুরবানী করার বিধান

ছাগল ভেড়া অথবা দুম্বা যত বড়ই হোক তাতে একাধিক ব্যক্তি শরীক হতে পারবে না। গরু, মহিষ ও উটে সাত বা সাতের কম যে কোন সংখ্যক ব্যক্তি শরীক হতে পারবে। শর্ত হলো: সকলের কুরবানী বা অন্য কোন ইবাদতের নিয়ত থাকতে হবে এবং কারো একসপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৩১৮,তিরমিযী হাদীস নং ১৫০১ ফতওয়ায়ে আলমগীরি ৫/৩০৪ জাওয়াহিরুল ফিকহ ৬/২৭২)

মাসআলা: শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী ছহীহ হবে না। (আল কাউসার)

মাসআলা: যৌথ কোরানিতে একাধিক গরু থাকলে ও সাত জনের বেশি শরীক হওয়া ছহীহ নয়। (বাদইয়ুস সনায়ে, আল বাহরুর রায়েক: ৮/ ৩২৫)

মাসআলা: কুরবানীর পশুতে আকীকা করা জায়েয আছে। তবে আলাদাভাবে করাই ভালো। (ফতওয়ায়ে তাতার খানিয়া ১৭/৪৫২)

পশু ক্রয় সংক্রান্ত মাসআলা

বর্তমানে অনলাইনে হাট ব্যাপক আকার ধারন করেছে। অনলাইনে পশুর ক্রয়-বিক্রয় শরীয়তসম্মত হওয়ার জন্য শর্ত হলো পশুর পূর্ণ বিবরন ক্রেতাকে অবগত করা। পশু দেখার পর বিবরণ অনুযায়ী পশু না পাওয়া গেলে ক্রেতার জন্য তা রাখা না রাখার অধিকার থাকবে।

মাসআলা: বর্তমানে স্কেল করে বা ফিতায় মেপে পশু ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। স্কেল করে যেহেতু পশুর ওজন নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই পশুকে বড় স্কেল মেশিনে উঠিয়ে মেপে কেজি দরে বিক্রি করা জায়েয। তবে ফিতায় মেপে কেজি দরে বিক্রি করা জায়েজ নয়। ফিতায় মেপে কেবল অনুমান করা যেতে পারে। পশু দেখার পর বেচা কেনা চুড়ান্ত হবে। (ফতওয়ায়ে উসমানী: ৩/৯৯)

জবেহ সংক্রান্ত মাসআলা

কোরবানিকারী পশু নিজ হাতে যবেহ করা উত্তম। যদি নিজে ভালোভাবে জবেহ করতে না পারে তাহলে সুন্নাহ পদ্ধতিতে জবেহ করতে পারে এমন ব্যাক্তি দিয়ে জবেহ করাবে। এ সময় নিজে উপস্থিত থাকা উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৯, জাওয়াহিরুল ফিকহ ৬/ ২৭৩)

মাসআলা: যিনি জবেহ করবেন তিনি বিসমিল্লাহ বলা জরুরী। ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ না বলে জবেহ করলে সে পশু হারাম হয়ে যায়। একাধিক ব্যক্তি ছুরি ধরলে সকলের উপর বিসমিল্লাহ বলা আবশ্যক। একজন জবেহ সম্পন্ন করতে না পারলে নতুন করে ভিন্ন কেউ ছুরি চালিয়ে জবেহ সম্পন্ন করলে তার উপরও আলাদাভাবে বিসমিল্লাহ বলা জরুরী। (ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া ১৭/৪৪৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৩৪)

জবেহ করার সময়

শহরে ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা ছহীহ নয়। শহরের এক জায়গায় নামায শেষ হলে নিজ মহল্লায় নামায শেষ হওয়ার আগেও কুরবানী করা ছহীহ হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৬/২৯৫, রদ্দল মুহতার ৯/৪৬০)

নিয়ত: কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করা ও যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তাদের নাম অন্তরে থাকাই যথেষ্ঠ। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বা কুরবানী দাতাদের নাম লেখা ও যবেহ কারীর নিকট অর্পন করা একটি অপ্রয়োজনীয় কাজ। (জাওয়াহিরুল ফিক্বহ ৬/২৭৩)

মাসআলা: যবেহ করা পশু ঠান্ডা হওয়ার আগে হাত পায়ের নালা ছাড়ানো, ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করা বা চামড়া খসানো ইত্যাদি মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে আলমগীরি ৫/৩০০, জাওয়াহিরুল ফিক্হ ৬/৩২৭)

মাসআলা: পশু যবেহ করার পূর্বে ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিবে। ধারহীন ছুরি দ্বারা যবেহ করা মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে আলমগীরি  ৫/৩০০)

কোরবানির দোয়া

  • কুরবানির পশু জবেহ করার জন্য শোয়ানোর পর দোয়া পড়া। দোয়াটি হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। যদিও অনেকে দোয়াটির সনদের ব্যাপারে মতপার্থক্য করেছেন। তবে এ দোয়াগুলো পড়ে কুরবানি করা উত্তম। তবে কেউ শুধু বিসমিল্লাহ বলে নালীগুলো কেটে দিলেই কুরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো-
  • اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ - بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

  • যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়বেন-
  • بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

  • নিজের পশু নিজে কুরবানি করলে পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়া-
  • اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।'

  • অন্য কেউ কুরবানি বা অন্য কারো কুরবানি করলে এ দোয়া পড়া-
  • اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।'

উল্লেখ্য, যদি কেউ একাকি কুরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কুরবানির পশু জবাই করার সময় ‘মিনকা-মিনকুম’ বলে যারা কুরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।

কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অন্যান্য জীব মারা যাবে, কষ্ট পাবে এটাই পৃথিবীর নিয়ম। জবাই করার সময় গরু ব্যথা তো পাবেই। শুধু গরু কষ্ট পায় তা নয়, ছাগল, মুরগি, মাছ, এমনকি শাক-সবজিও কষ্ট পায়। তবে সেটা নিয়ে মুসলিমদের ভাবনার কিছু নেই। কেননা, জবেহ করে গোস্ত খাওয়া হালাল। আর কোরবানী করা তো ইসলামের নির্দেশ।

যতদুর জানি, জবাই করার সময় চারটি জিনিস কেটে ফেলার আগ পর্যন্ত গরু ব্যথা অনুভব করে।

আমরা মুসলিমরা যেভাবে জবেহ করি, তাতে প্রথমেই (মাঝে অবস্থিত) শ্বাসনালী ও খাদ্যনালী কাটা পড়ে, এর পর কাটা পড়ে (দুই পাশে অবস্থিত) রক্তনালী (ভেইন / আর্টারি) দু'টি। ভেইন / আর্টারি কাটা পড়ার ফলে প্রচুর রক্ত বের হয়ে আসতে থাকে। এই অবস্থায় এমন এক পরিস্থিতি সৃস্টি হয় যা পশুটিকে stun তথা স্তম্ভিত বা অচেতন অবস্থায় নিয়ে যায়।

আর, এরপর সে আর কোনো কষ্ঠ অনুভব করে না। যদিও এর পরে প্রাণীটি হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করে থাকে।

আমরা যেহেতু পুরোপুরী দ্বিখণ্ডিত করে ফেলি না, তাই তার স্পাইনাল কড অক্ষত থাকে এবং হার্ট পাম্প করা অব্যহত রাখে। মস্তিষ্ক শরীরের অন্যত্র নির্দেশ পাঠাতেও সক্ষম থাকে। এদিকে যেহেতু তার মাথা রক্তের সরবরাহ পাচ্ছে না, ব্রেইন রক্তের জন্য হৃৎপিণ্ডে সংকেত পাঠাতে থাকে। আর হৃৎপিণ্ড আরো বেশী চেষ্টা করতে থাকে রক্ত পাম্প করার। এর ফলে শরীরের সব রক্ত বের হয়ে পড়ে যায়।

অন্যদিকে, (অমুসলিমরা) যখন পুরো মাথা আলাদা করে দেয়, এর ফলে স্পাইনাল কড বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ফলে পশুটি হার্ট এট্যাক করে দ্রুত মারা যায়, কিন্তু সারা শরীর থেকে রক্ত ভালোভাবে বের হয়ে যায় না।

উল্লেখ্য,

জবেহ করার সময় ধারালো ছুরি ব্যবহার করা দরকার, যেন দ্রুত জবেহ্‌ সম্পন্ন হয়ে যায়।

জবেহ হয়ে গেলে, পশুটিকে সময় দেয়া দরকার, যতক্ষণ না সে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। যবেহ করার পর যতক্ষণ সে নড়াচড়া করে, হৃদপিণ্ড কার্যকর থাকে এবং রক্ত বের হয়ে যায়, আর রক্ত বের হয়ে যাওয়া উচিত। যতক্ষণ না নিস্তেজ হয়ে যায়, ততক্ষণ পায়ের রগ কাটা কিংবা চামড়া ছাড়ানোর কাজ শুরু করা নিষিদ্ধ।

দেখা যায়, অনেক সময় অজ্ঞতাবশত কশাইরা ছুরির মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে স্পাইনাল কড কেটে দেয়, যেটা ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে।

জবাই করার সময় শ্বাসনালী ও খাদ্যনালী এবং গলার পাশের ভেইন কেটে ফেলা নিশ্চিত করা দরকার। তবে শ্বাসনালী ও খাদ্যনালী এবং একটি রক্তনালী কাটা হলেও জবেহ যথাযথ বলে গণ্য হয়।

পশুর হারাম অংশ 

(১) প্রবাহিত রক্ত। (২) পুরুষাঙ্গ। (৩) স্ত্রীঅঙ্গ। (৪) অন্ডকোষ। (৫) পেশাবের থলি। (৬) পিত্ত। (৭) গোশত ও চামড়ার মাঝখানের গুটি। এই সাত জিনিস ছাড়া বাকি সব কিছু খাওয়া হালাল। (বাদইয়ুস সনায়ে ৫/৬১, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৪০৬)

গোশত ও চকমড়ার বিধান 

কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিবদের দেওয়া, এক ভাগ প্রতিবেশি ও আত্মীয়দের মাঝে বন্টন করা আরেক ভাগ নিজেদের জন্য রাখা মুস্তাহাব। তবে এর চেয়ে কম বেশি করতেও কোন সমস্যা নেই। (সূরা হজ্ব ৩৬ নং আয়াতের তফসীর দ্রষ্টব্য, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮)

বিঃদ্রঃ অনেক এলাকায় “সমাজের গোস্ত” বলে কুরবানীদাতাদের উপর একটা অংশ ধার্য করে দেয়া হয়। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। এ ধরনের প্রথা পরিত্যাজ্য। প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে নিজ সুবিধামত  বন্টন করবে। (সূরা বাকারা: ১৮৮)

মাসআলা: পশু থেকে চামড়া আলাদা করার পূর্বে তা বিক্রি করা জায়েজ নাই। (ফতওয়ায়ে কাসিমিয়া: ২২/৪৬১)

মাসআলা: কুরবানীর চামড়া দ্বীনি মাদ্রাসার অসচ্ছল ছাত্রদের দান করা উত্তম। এতে দ্বিগুন সাওয়াব অর্জিত হয়। (১) দান করার সাওয়াব। (২) দ্বীনের প্রচার প্রসারে সহযোগিতার সাওয়াব। (৩) ছদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব। (সূরা বাকারা: ২৭৩ নং আয়াতের তফসীর দ্রষ্টব্য, ফতওয়ায়ে শামী ৩/৩০৪, ফতওয়ায়ে কাসিমিয়া: ১০/৫৮৪)

আমাদের শেষ কথা

আশা করি কোরআন ও হাদিসের আলোকে কোরবানির দোয়া ও রেফারেন্স সহকারে কোরবানির নিয়ম কানুন নামক আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি কোরবানি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। আশা করি ভালো লেগেছে। ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আর কোনো প্রশ্ন থাকলে প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারেন।

আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন