কীভাবে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে ?

হায় বন্ধু,

দৈনিন্দিন আমাদের মনে কত বিচিত্র প্রশ্নের জন্ম হয় । যার কতগুলো আমরা জানি আবার কতগুলো আমরা জানিনা । অন্বেষা.নেট চায় সব সময় পাঠকের এ ধরণের বিচিত্র প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানের মাধ্যমে পাঠকের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে । 

প্রশ্নটি গুরুতর যা আমাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িত কীভাবে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে ? যার উত্তর আমরা আমাদের সামনে বিদ্যমান বিজ্ঞানের মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করবো । আশা করি যদি উত্তরটি আপনার পছন্দ না হয় এবং এটি সমন্ধে আপনার কোন রকম অভিযোগ থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন ।

কীভাবে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে
পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল

কীভাবে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে

এই পৃথিবীতে কীভাবে সর্বপ্রথম প্রাণের আবির্ভাব হয়েছিল ? এটাই বিজ্ঞান মহলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রহস্য

বিবর্তনবাদীদের মতে, ২৬০ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর বায়ূমন্ডলে প্রচুর পরিমানে মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন, সালফার, জলীয় বাষ্প, নাইট্রোজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইড, গ্যাস বিদ্যমান ছিল । কিন্তু অক্সিজেন ছিল না । 

অহরহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যৎপাত, বায়ূমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বজ্রপাতের ফলে ও অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে এ সকল মৌল ও যৌগ মিলিত হয়ে অ্যামাইনো এসিড এবং নিউক্লিক এসিড উৎপন্ন হয় । 

পরে অ্যামাইনো এসিড এবং নিউক্লিক এসিড মিলিত হয়ে নিউক্লিওপ্রোটিন অনুর সৃষ্টি হয় ।নিউক্লিওপ্রোটিন অনু ক্রমে নিজেদের প্রতিরূপ গঠনের ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে জীবনের সূত্রপাত ঘটায় ।

কীভাবে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে ?

বিবর্তনের পক্ষে অনেক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকলেও এর বিপক্ষে ও যুক্তি প্রমাণের অভাব নেই । তাই চাইলেও কেউ বিবর্তনকে ১০০% প্রমাণিত ধরে নিতে পারবেন না । বিবর্তনের বিপক্ষে এই রকম অসংখ্য যুক্তি প্রমানের কয়েকটি  নিচে দেওয়া হলো:

১. জীবকোষ এবং দেহস্থ রক্ত ও অন্যান্য তরল পদার্থে নানারকম লবনের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে ধারণা করা হয় প্রাণের উৎপত্তি প্রথমে সমুদ্রে হয়ে ছিল । অর্থ্যাৎ পৃথিবীতে প্রানের অস্তিত্বের জন্য দরকার তরল জল । 

এখন প্রশ্ন হলো এই জল এলো কোথা থেকে ? কারণ ৪৫৪ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবী জন্মের সময় চারদিকে শুধু ছিল ফুটন্ত লাভা । এই অবস্থায় তরল জলের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব । এর ৪৪ কোটি বছর পর ৩০ কোটি বছর ধরে চলল উল্কাপাত । বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন late heavy bombardment । 

প্রথমে বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই উল্কাপাতের সময় গ্রহাণুগুলো সাথে করে জল নিয়ে এসেছিল । কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল বিজ্ঞানীদের এই দাবি ভুল প্রমাণিত হয় । 

সম্প্রতি পশ্চিম ব্রাজিলে আগ্ন্যেয় গিরির পথ বেয়ে বেরিয়ে এসেছে ছোট্ট একটি হীরা । আসলে হীরে পাওয়া কোন ব্যাপার ছিল না । যা ব্যাপার ছিল তা হলো এই হীরের মধ্যে পাওয়া রিংউডাইট খনিজ শ্রেণির খনিজ । 

রিংউডাইট খনিজ হলো এমন এক ধরনের খনিজ যা তার নিজের ওজনের তুলনায় বিপুল পরিমান জল ধারণ করতে পারে । ভূগর্ভে যে পরিমাণ রিংউডাইট খনিজ রয়েছে তার তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ২০১৪ সালে  স্মান্দ ও জেকব সেন এক বিষ্ফোরক তথ্যে বলেন পৃথিবীর ৬৬০ কি.মি. নিচে লুকিয়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ জলের উৎস যা সবগুলো মহাসাগরের জলের সমষ্টির প্রায় ৩ গুনের ও বেশি । 

এখন প্রশ্ন হলো পৃথিবী তৈরি হওয়ার সময় এই জল কোথায় ছিল ? এই জল কিন্তু আমাদের সৌরমন্ডলে তৈরি হয়নি । পৃথিবী থেকে এমন কি সূর্যের থেকেও এই জলের বয়স বেশি ।

আরো পড়তে পারেন

৩. বিবর্তনবাদের দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো জীবকোষ গঠনের জটিলতা । একটি জীবকোষ অসংখ্য অঙ্গানু দ্বারা গঠিত । এর মধ্যে রয়েছে প্রোটোপ্লাজম, কোষঝিল্লি, মাইট্রোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, গলজি বডি, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, কোষগহ্বর, লাইসোজম, সেন্ট্রোজম, নিউক্লিয়াস, ক্রোমজম ইত্যাদি । 

এর মধ্যে প্রত্যেকটির আবার রয়েছে আলাদা আলাদা কাজ । এদের মধ্যে ক্রোমোজম অঙ্গানুটি DNA ( DeOxyribo Nucleic Acid )  এবং RNA ( ribo Nucleic Acid ) l দ্বারা গঠিত । DNA কে অনেকটা কম্পিউটার কোডিংয়ের সাথে তুলনা করা যায় । মনে করুণ আমি নিচে একটি লেখা দিলাম

<marquee behavior="scroll" direction="left">পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল</marquee>

এখন এই লেখাটি কোডিং হিসেবে যুক্ত করলে দেখুন ফলাফল কি দাড়ায়


 পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল


 

ঠিক এমনি করে জীবদেহের DNA কোডিং করা । এই DNA তে চারটি অক্ষর দিয়ে আপনার পুরো শরীরের গঠনের এটি নকশা সেট করা আছে । এই চারটি অক্ষর হলো A.T.G.C বা Adenine, Thymine, Guanine, Cytosine । বায়োলজিস্টরা সংক্ষেপে এটাকে বলে "জেনেটিক" কোড । 

উপরে বর্নিত HTML  কোডের মাধ্যমে "পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল" লেখাটিকে যেমন ভাবে চলন্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তেমনি ভাবে DNA এর মাধ্যমে একটি জীবের বংশানুক্রমে প্রাপ্ত সকল বৈশিষ্ট্যের নির্দেশ দেওয়া থাকে । 


কীভাবে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে ?
 DNA কে অনেকটা কম্পিউটার কোডিংয়ের সাথে তুলনা করা যায়

অর্থ্যাৎ আপনার চোখ কেমন হবে, নাক কেমন হবে, চুল কেমন হবে, ত্বক কেমন হবে, আপনি ছেলে হবেন না মেয়ে হবেন,  এমন কি আপনি কত বছর বেঁচে থাকবেন তার নির্দেশ থাকে DNA তে । এক কথায় DNA এর মধ্যে লুকিয়ে আছে জীবদেহের সব কিছু । 

কোন রকম বুদ্ধিমান সত্ত্বার সরাসরি হস্তক্ষেপ  ছাড়া প্রাণের অস্ত্বিত্ব অসম্ভব ।  DNA সম্পর্কে ইংরেজ দার্শনিক Antony Flew  বলেন, almost entirely because of the DNA material has done is that is has shown, by the almost unbelievable complexity of the arrangements which are needed to produce (life), that intelligence must have been involved in getting these extraordinarily diverse elements to work together.

DNA তে থাকা তথ্য সম্পর্কে বিখ্যাত এথেইস্ট বায়োলজিস্ট, রিচার্ড ডকিন্স লিখেছেন, There is enough information capacity in a single human cell to store the Encyclopaedia Britannica, all 30 volumes of it, three or four time over. 

আরো পড়তে পারেন

মনে করুন আপনরা সামনে থাকা মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে এলোমেলো ভাবে টাইপ করে রবী ঠাকুরের গীতাঞ্জলীর মতো একটি কাব্যগ্রন্থ কিংবা গীতাঞ্জলীর মধ্যে থাকা একটি কবিতার মতো একটি কবিতা লেখা যেমন অসম্ভব তেমনি ভাবে প্রাণিদেহের  DNA তে  থাকা কোডিং কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বার হস্তক্ষেপ ছাড়া অসম্ভব ।

৩. তৃতীয় সমস্যাটি হলো মিসিং লিংক । মনে করুন বাঁনর লক্ষ কোটি বছরের বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষে রূপান্তর হয়েছে । তাহলে এখন অবশ্যই বাঁনর এবং মানুষের মাঝামাঝি একটি প্রজাতির উপস্থিত থাকার কথা । যা সংখ্যায় কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি হতে পারতো ।

কিন্তু এরকম প্রজাতির প্রাণি আমরা একটাও দেখতে পাই না কেন ? এমন কি এখন পর্যন্ত প্রমাণিত ভাবে এই ধরনের কোন প্রাণির জীবাশ্ম পর্যন্ত পাওয়া যায় নি । যা বিবর্তনবাদীদের মতামতের পক্ষে অকাট্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে । 

বিবর্তনবাদের অসাড়তা নিয়ে লেখলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে । তাই ভবিষ্যতে আমার এই ব্লগে বিবর্তনবাদের অসাড়তা নিয়ে একটি ধারাবাহিক আর্টিকেল লেখার ইচ্ছে রয়েছে । আজ এ পর্যন্ত । ভালো থাকুন । সুস্থ থাকুন

আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন