মিটার কাকে বলে ? জেনে নিন মিটারের ইতিহাস

দৈর্ঘ্যের একক মিটার। মিটার কাকে বলে? মিটারেরর সংজ্ঞা শিখতে আমাদের কয়েক মিনিট লাগবে। কিন্তু তুমি কি জান মিটারেরর সংজ্ঞা নির্ধারণে বিজ্ঞানীদের দুইশ বছর সময় লেগেছে! কি অবাক হচ্ছো! হ্যাঁ, সত্যি বলছি মিটারেরর সংজ্ঞা নির্ধারণে বিজ্ঞানীদের দুইশ বছর সময় লেগেছে। এই আর্টিকেলে মিটার কাকে বলে এবং মিটারের সংজ্ঞা নির্ধারণে বিজ্ঞানীদের ২০০ বছরের নিরলস প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

মিটার কাকে বলে
দৈর্ঘ্যের একক মিটার

মিটার কাকে বলে?

ফরাসি ভাষায় 'মিটার' অর্থ মাপা। এক সেকেন্ডের ২৯,৯৭,৯২,৪৫৮ ভাগের এক ভাগ সময়ে আলো যতটুকু দৈর্ঘ্য ভ্রমণ করে তাই হচ্ছে এক মিটার। সূত্র

মিটারের ইতিহাস

১৯৬০ সালের আগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দৈর্ঘ্যসহ বিভিন্ন পরিমাপের জন্য ভিন্ন ভিন্ন একক ব্যবহার করা হতো। কোনো দেশে দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে ব্যবহার করত ফুট, কোনো দেশে ব্যবহার করতো গজ ইত্যাদি। ফলে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বানিজ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র সমস্যার সৃষ্টি হতো। এই সমস্যার কথা বিবেচনা করে ১৯৬০ সাল থেকে পৃথিবীর সমগ্র দেশে একটি সাধারণ পরিমাপের পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এটিকে এসআই বা ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেম অব ইউনিট বলে।

মিটার কাকে বলে
প্যারিসের এক পুরোনো দালানের দেয়ালে লাগানো মিটার স্কেল ; image source: wikimedia commons

এই আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সকল ভৌত রাশির জন্য কেবল একটি নির্দিষ্ট একক নির্ধারণ করা হয়।এই সময়ই দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে মিটার নির্ধারণ করা হয়। মিটারকে ১৯৬০ সালে দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও মিটারের ইতিহাস তারও আগে থেকে শুরু।

১৮৭৫ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম নামক মিশ্রিত ধাতুর তৈরি একটি দন্ডের দুই প্রান্তে দুটি দাগ দেন। ওই নির্দিষ্ট দাগের মধ্যকার দূরত্বকে তাঁরা এক মিটার হিসেবে নির্ধারণ করেন। ছবি

কিন্তু বিজ্ঞানে স্বৈরাচারী নিয়ম চলে না। বিজ্ঞান চায় প্রমাণ, বিজ্ঞান চায় সংজ্ঞা। যার কারণে দৈর্ঘ্যের একক মিটারের সংজ্ঞা নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে মিটারকে বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

আরো পড়তে পারেন

এর মধ্যে প্রথমবার নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর মেরুর দূরত্বের এক কোটি ভাগের এক ভাগকে ১ মিটার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ১৭৯৯ সালে ফ্রান্সের বিজ্ঞান একাডেমি সেই এক মিটার দৈর্ঘ্যের একটি প্লাটিনাম দণ্ড তৈরি করেন। যার নাম দেওয়া হয় "মিটার অফ দ্য আর্কাইভস"।

মিটার কাকে বলে
“মিটার অফ দ্য আর্কাইভস” বা প্রথম মিটার দণ্ড; image source: siriustwins.com

পরবর্তীতে মিটারের এই ধারণাটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ১৮৭৫ সালে প্যারিসে আয়োজিত মেট্রিক সম্মেলনে ১৭টি দেশের স্বাক্ষরিত Treary of themetre  চুক্তির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে International Bureauof Weights and Measures (BIPM). নামক আন্তর্জাতিক পরিমাপ সংস্থার। প্রথমে ১৭টি দেশ এ সংস্থার সদস্য হলেও পরে আরো অনেক দেশ এ সংস্থায় যুক্ত হন।

মিটারের এ ধারণাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হলেও এর ছিল অনেক সীমাবদ্ধতা। এর প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো এটিকে মহাজাগতিক কোনো ধ্রুবক দিয়ে প্রকাশ করতে না পারা।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পৃথিবীর বাইরের কাউকে দৈর্ঘ্যের একক মিটার চেনাতে হলে তাকে পৃথিবীর মেরু এবং নিরক্ষরেখা চেনাতে হবে। তাই বিজ্ঞানীদের কাছে এই সংজ্ঞাটি বেশ লজ্জাজনক সীমাবদ্ধ মনে হয়।

এরপর আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা মিটারকে সংজ্ঞায়িত করা হলো ।এ সংজ্ঞাটিতে বলা হয়, ক্রিপ্টন-৮৬ দ্বারা শূন্যে নির্গত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ১৬,৫৯,৭৬৩.৭৩ গুণ হচ্ছে এক মিটার।

মিটার কাকে বলে
মিটারকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যবহৃত ক্রিপটন আলোর ল্যাম্প; image source: wikimedia commons

১৯৬০ সালের ওজন ও পরিমাপের ১১তম সাধারণ সম্মেলনে গৃহীত মিটারের এই সংজ্ঞায় মিটারের দৈর্ঘ্য কিন্তু পরিবর্তন হয়নি, শুধু আগের দৈর্ঘ্যটারই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে নতুন ভাবে।

বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মিটারকে সংজ্ঞায়িত করার আরো সর্বজনীন, আরো মৌলিক একটি উপায় নির্ধারিত হয়।

আমরা জানি আলোর গতি ধ্রুব। কোনো প্রসঙ্গ কাঠামোর ধার ধারে না এ গতি। মহাবিশ্বের যে কোনো স্থানে এই গতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার প্রায়।

তাই ১৯৮৩ সালে মিটারকে আবার সংজ্ঞায়িত করা হয়। এখন মিটারের সংজ্ঞায় বলা হয়, এক সেকেন্ডের ২৯,৯৭,৯২,৪৫৮ ভাগের এক ভাগ সময়ে আলো যতটুকু দৈর্ঘ্য ভ্রমণ করে তাই হচ্ছে এক মিটার।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি মিটার কাকে বলে? তা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন তোমার সফলতায়  অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...

আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন