বাচ্য কাকে বলে? বাচ্য চেনার সহজ উপায়

i. জিয়ান বই পাঠ করেছে। ii. জিয়ান কর্তৃক বই পাঠ হয়েছে দুটি বাক্য একই কিন্তু তাদের বক্তব্য প্রকৃতি ভিন্ন। বক্তব্যের এই ভিন্ন প্রকৃতিকেই বাচ্য বলে। বাচ্যকে ইংরেজিতে বলে voice ইংরেজি voice দুই প্রকার হলেও বাংলা বাচ্য প্রধানত তিন প্রকার। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো বাচ্য কাকে বলে? বাচ্য কত প্রকার? বাচ্য চেনার উপায় এবং বাচ্য পরিবর্তনের নিয়ম। তো চলুন জানা যাক বাচ্য কাকে বলে

বাচ্য কাকে বলে
বাচ্য কাকে বলে

বাচ্য শব্দের অর্থ কি

বাচ্য শব্দের অর্থ বক্তব্য। ইংরেজিতে বলে voice

বাচ্য কাকে বলে

ক্রিয়াপদের সঙ্গে কর্তা, কর্ম প্রভৃতি অন্য পদের সম্বন্ধ জ্ঞাপক বাচন ভঙ্গিকে বাচ্য বলে। এক কথায়, বাক্যের বিভিন্ন ধরনের প্রকাশভঙ্গিকে বাচ্য বলে।

বাচ্য কত প্রকার ও কী কী

ক্রিয়া পদের প্রাধান্যের ভিত্তিতে বাচ্যকে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়।

বাচ্য তিন প্রকার। 

যথা: ১. কর্তৃবাচ্য (Active voice) ২. কর্মবাচ্য (Passive voice) ৩. ভাববাচ্য।

১. কর্তৃ বাচ্য কাকে বলে

যে বাক্যে কর্তার অর্থ প্রাধান্য রক্ষিত হয় এবং ক্রিয়াপদ কর্তার অনুসারী হয়, তাকে কর্তৃবাচ্যের বাক্য বলে। যেমন: ছেলেরা ফুটবল খেলছে।

কর্তৃবাচ্যের বৈশিষ্ট্য:

ক. কর্তৃবাচ্যে ক্রিয়াপদ সর্বদাই কর্তার অনুসারী হয়। যেমন: ছাত্ররা অঙ্ক করছে।

খ. কর্তৃবাচ্যে কর্তায় প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি এবং কর্মে দ্বিতীয়া, ষষ্ঠী বা শূন্য বিভক্তি হয়। যেমন: শিক্ষক ছাত্রদের পড়ান। রোগী পথ্য সেবন করে। 

গ. ক্রিয়াপদ সকর্মক হলে কর্মে 'কে' বিভক্তি হয়। যেমন: ধনাঢ্যরা নিজেদের স্বার্থেই দারিদ্র্য সৃষ্টি করে।

২. কর্মবাচ্য কাকে বলে

যে বাক্যে কর্মের সাথে ক্রিয়ার সম্বন্ধ প্রধানভাবে প্রকাশিত হয়, তাকে কর্মবাচ্য বলে। যেমন : আলেকজান্ডার কর্তৃক পারস্য দেশ বিজিত হয়। তবে এ ধরনের বাক্য চলিত বাংলা ভাষায় শোভনীয় বা আদরণীয় নয়।

কর্মবাচ্যের বৈশিষ্ট্য

ক. কর্মবাচ্যে কর্মে প্রথমা, কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি ও দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক অনুসর্গ ব্যবহৃত হয় এবং ক্রিয়াপদ কর্মের অনুসারী হয়। যেমন : শিকারি কর্তৃক ব্যাঘ্র নিহত হয়েছে। চোরটা ধরা পড়েছে। 

খ. কখনো কখনো কর্মে দ্বিতীয়া বিভক্তি হতে পারে। যেমন: আসামিকে জরিমানা করা হয়েছে।

আরো পড়তে পারেন

৩. ভাব বাচ্য কাকে বলে

যে বাচ্যে কর্ম থাকে না এবং বাক্যে ক্রিয়ার অর্থই বিশেষভাবে ব্যক্ত হয়, তাকে ভাববাচ্য বলে।

ভাববাচ্যের বৈশিষ্ট্য :

ক. ভাববাচ্যের ক্রিয়া সর্বদাই নাম পুরুষের হয়। ভাববাচ্যের কর্তায় যষ্ঠী, দ্বিতীয়া অথবা তৃতীয়া বিভক্তি প্রযুক্ত হয়। যেমন:

i. আমার (কতায় ষষ্ঠী) খাওয়া হলো না (নাম পুরুষের ক্রিয়া)।

ii. আমাকে (কতায় দ্বিতীয়া) এখন যেতে হবে (নাম পুরুষের ক্রিয়া)।

iii. তোমার যারা (কতায় এ কাজ হবে না (নাম পুরুষের ক্রিয়া)। 

খ. কখনো কখনো ভাববাচ্যে কর্তা উহ্য থাকে, কর্ম দ্বারাই ভাববাচ্য গঠিত হয়। যেমন : এ পথে চলা যায় না। এবার ট্রেনে ওঠা যাক। কোথা থেকে আসা হচ্ছে?

গ. মূল ক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগী ক্রিয়ার সংযোগ ও বিভিন্ন অর্থে ভাববাচ্যের ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন: এ ব্যাপারে আমাকে দায়ী করা চলে না। এ রাস্তা আমার চেনা নেই।

এ তিন প্রকার বাচ্য ছাড়াও আরও এক ধরনের বাচ্য রয়েছে। সেটি হলো কর্মকর্তৃবাচ্য

কর্মকর্তৃবাচ্য কাকে বলে

যে বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয় হয়ে বাক্য গঠন করে, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে। এখানে কর্তার উল্লেখ থাকে না, কর্মপদই কর্তার মতো কাজ করে এবং কর্ম নিজে নিজেই সম্পাদিত হচ্ছে বলে মনে হয়। যেমন : 

i. আকাশে মেঘ করেছে।

ii. সুতি কাপড় অনেক দিন টেকে।

iii. আম পাকে বৈশাখে। 

iv. বাঁশি বাজে ঐ মধুর লগনে।

v. কাজটা ভালো দেখায় না।

vi. বটতলায় মেলা বসেছে।

বাচ্য পরিবর্তনের নিয়ম

১. কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তন

নিয়ম : কর্তায় তৃতীয়া, কর্মে প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি এবং ক্রিয়া কর্মের অনুসারী হয়। যেমন:

কর্তৃবাচ্য: বিধানকে সকলেই আদর করে।➡ কর্মবাচ্যে: বিদ্বান সকলের দ্বারা আদৃত হন।

কর্তৃবাচ্য: খোদাতায়ালা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন।➡ কর্মবাচ্যে: বিশ্বজগৎ খোদাতায়ালা কর্তৃক সৃষ্টি হয়েছে

জ্ঞাতব্য : কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়া অকর্মক হলে সেই বাক্যের কর্মবাচ্য হয় না।

লক্ষণীয় : কর্তৃবাচ্যে ব্যবহৃত তৎসম মিশ্রক্রিয়াটি কর্মবাচ্যে যৌগিক ক্রিয়াজাত ক্রিয়াবিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হয়। 

২. কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্যে পরিবর্তন

নিয়ম: কর্তায় ষষ্ঠী বা দ্বিতীয়া বিভক্তি হয় এবং এ ক্রিয়া নাম পুরুষের হয়। যেমন:

কর্তৃবাচ্য: আমি যাব না।➡ভাববাচ্য: আমার যাওয়া হবে না।

কর্তৃবাচ্য: তুমিই ঢাকা যাবে।➡ভাববাচ্য: তোমাকেই ঢাকা যেতে হবে।

৩. কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তর

নিয়ম : কর্তায় প্রথমা বিভক্তি, কাৰ্মে দ্বিতীয়া অথবা শূন্য বিভক্তি প্রযুক্ত হয় এবং ক্রিয়া কর্তার অনুসারী হয়। যেমন:

কর্মবাচ্য: দস্যুদল কর্তৃক গৃহটি লুণ্ঠিত হয়েছে।➡কর্তৃবাচ্যে: দস্যুদল গৃহটি লুণ্ঠন করেছে।

কর্মবাচ্য:  হালাকু খা কর্তৃক বাগদাদ বিধ্বস্ত হয়।➡কর্তৃবাচ্যে: হালাকু খাঁ বাগদাদ ধ্বংস করেন।

৪. ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তর

নিয়ম: কর্তায় প্রথমা বিভক্তি প্রযুক্ত হয় এবং ক্রিয়া কর্তার অনুসারী হয়। যেমন:

ভাববাচ্য: এবার একটি গান করা হোক।➡ কর্তৃবাচ্যে: এবার (তুমি) একটি গান কর।

ভাববাচ্য: তোমাকে হাঁটতে হবে। ➡ কর্তৃবাচ্যে: তুমি হাঁটবে।

বাচ্য চেনার উপায়

১. ক্রিয়াপদ যদি কর্তার পুরুষ ধরে হয়, তাহলে অবশ্যই কর্তৃবাচ্য হবে। মনে রাখবে, জড় পদার্থও কর্তা হতে পারে। যেমন : সূর্য ওঠে।

২. এককর্মক ক্রিয়ার কর্মে যদি 'কে' বিভক্তি থাকে, তাহলে জানবে সেটি কোনোমতেই কর্মবাচ্য বা কর্মকর্তৃবাচ্য হবে না। কারণ ওই দুটি বাচ্যে কর্মকে কর্তা সাজতে হয় আর কর্তা সাজাতে হলে শূন্য বিভক্তির রূপটি ধারণ করতেই হয়।

৩. প্রকৃত কর্তায় দ্বারা/কর্তৃক/দিয়ে অনুসর্গ থাকলে সেটি কর্মবাচ্য হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

৪. মূল ক্রিয়াটিকে যদি ত/ইত প্রত্যয় যোগে বিশেষণে পরিণত করা হয়, (যেমন: পঠিত, ভুক্ত, গৃহীত, বর্জিত, পরিত্যক্ত ইত্যাদি) তাহলে সেটি প্রায় সব সময়ই কর্মবাচ্য। যেমন : স্থানটি পরিত্যক্ত হয়েছে।

৫. কর্মকর্তৃবাচ্যে কখনও কর্তার উল্লেখ থাকে না।

৬. ক্রিয়া অকর্মক হলে স্বাভাবিক ভাবেই তার কর্মবাচ্য সম্ভব নয়। তাতে কর্তায় দ্বারা/দিয়া যাই থাক।

৭. কর্মটি ক্রিয়ার ভাব-জাত বিশেষ্যের সাথে হাইফেন দিয়ে জুড়ে দেওয়া থাকলে সেটি অবশ্যই ভাববাচ্য। যেমন : "আমার ভাত-খাওয়া শেষ হল।"

৮. এছাড়া, ভাববাচ্যে কর্তায় কে/র-এর বিভক্তি থাকবে অথবা কর্তা থাকবে না।

৯. ভাববাচ্যে হ ধাতু আছে দেখেই সহসা ভাববাচ্য ধরতে নেই। কর্মবাচ্যেও ধাতু থাকে।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি বাচ্য অর্থ কি? বাচ্য কাকে বলে? বাচ্য চেনার উপায় ইত্যাদি বিস্তারিত আলোচনাটি তোমার সফলতায়  অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...

 আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন