অনুসর্গ কাকে বলে উদাহরণসহ বিস্তারিত

প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণে আনুসর্গ স্বতন্ত্র কোন পদ না হলেও আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে অনুসর্গ স্বতন্ত্র একটি পদ। প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণ অনুসারে অনুসর্গ মূলত অব্যয়ের একটি প্রকারভেদ। তবে যেহেতু আধুনিক ব্যাকরণ অনুসারে অনুসর্গ একটি পদ তাই বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনুসর্গ গুরুত্বপূর্ণ। পদ সমন্ধে ধারাবাহিক আলোচনার আজকের আলোচ্য বিষয় অনুসর্গ কাকে বলে এবং উদাহরণসহ অনুসর্গ সমন্ধে বিস্তারিত।

অনুসর্গ কাকে বলে
অনুসর্গ কাকে বলে

অনুসর্গ কাকে বলে

'অনুসর্গ' শব্দটির 'অনু' অর্থ- পরে বা পশ্চাতে, আর সর্গ মানে সৃষ্টি বা ব্যবহার। বাংলা ভাষায় এক ধরনের সহায়ক শব্দ বাক্যে অন্য কোনো পদের পরে বসে পদটিকে বাক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত করে কিংবা বিভক্তির মতো কাজ করে, এগুলোকে অনুসর্গ (post position) বলে। 

পদের পরে ব্যবহৃত হয় বলে এগুলোকে পরসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয়ও বলা হয়ে থাকে। অনুসর্গ অব্যয়ের মতো। তাই এদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করলেও আকারের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন: বিনি সুতায় গাঁথা মালা ।

অনুসর্গ কত প্রকার ও কী কী

অনুসর্গ কাকে বলে
চিত্রে অনুসর্গের শ্রেণিবিভাগ দেখানো হয়েছে

গঠন ও ব্যুৎপত্তি অনুসারে অনুসর্গকে ভাগ করা চলে।

১. ব্যুৎপত্তি অনুসারে অনুসর্গের শ্রেণিবিভাগ

ব্যুৎপত্তি অনুসারে অনুসর্গগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ক. নাম বা বিশেষ্য অনুসর্গ খ. ক্রিয়া অনুসর্গ

ক. নাম বা বিশেষ্য অনুসর্গ কাকে বলে

ক্রিয়া ছাড়া অন্য শব্দ থেকে যেসব অনুসর্গ এসেছে, সেগুলোকে নামজাত বা বিশেষ্য অনুসর্গ বলে। এগুলো শব্দজাত বলে নাম অনুসর্গের অপর নাম শব্দজাত অনুসর্গ। যেমন: নিকট, মধ্যে, অপেক্ষা কারণে, বই বিনা, কাছে, দ্বারা, বাবদ ইত্যাদি

নাম অনুসর্গ আবার উৎসের দিক দিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত। যথা : i. তৎসম বা সংস্কৃত অনুসর্গ, ii. বিবর্তিত (তদ্ভব) অনুসর্গ,  iii. বিদেশি অনুসর্গ

i. সংস্কৃত / তৎসম অনুসর্গ  কাকে বলে

যেসব শব্দ সরাসরি অপরিবর্তিত আকারে সংস্কৃত থেকে বাংলা ভাষায় এসে অনুসর্গ রূপে ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোকে সংস্কৃত বা তৎসম অনুসর্গ বলে। যেমন: 

অপেক্ষা: প্রাণের অপেক্ষা প্রিয় আর কী আছে?

অবধি: সোমবার অবধি বাড়িতে থাকব।

ii. বিবর্তিত (তদ্ভব) অনুসর্গ কাকে বলে

যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত আকারে বাংলায় এসে অনুসর্গ রূপে ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোকে বিবর্তিত (তদ্ভব) অনুসর্গ বলে। যেমন :

বিনা: দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে? 

তরে: সকলের তরে সকলে আমরা।

পানে: গরু চলে মাঠের পানে।

iii. বিদেশি (ফারসি) অনুসর্গ কাকে বলে

যেসব বিদেশি শব্দ বিশেষত ফারসি শব্দ বাংলা ভাষায় অনুসর্গের মতো ব্যবহৃত হয়, তাদের বিদেশি অনুসর্গ বলে। যেমন:

বদলে: বাবা রাতে ভাতের বদলে রুটি খান।

বনাম : আজ বাংলাদেশ বনাম ভারতের খেলা (ক্রিকেট)।

দরুন: বৃষ্টির দরুন খেলা পণ্ড হয়ে গেল।

আরো পড়তে পারেন

খ. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ কাকে বলে

বিভিন্ন কারকের অর্থ বোঝাতে যেসব অসমাপিকা ক্রিয়া অনুসর্গের মতো ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে বলা হয় ক্রিয়া অনুসর্গ। এগুলো ক্রিয়াজাত বলে ক্রিয়া অনুসর্গকে ক্রিয়াজাত অনুসর্গও বলা হয়। যেমন: 

করে: বাড়ির কাজ শেষ করে তারপর গেম খেলবে। 

দিয়ে: চামচ দিয়ে চিনিটা গুলে নাও।

বলে: তুমি আচ বলেই আমার ভরসা।

ক্রিয়াজাত অনুসর্গের আবার তিনটি রূপ লক্ষ করা যায়। যথা: i. সাধু ii. চলিত ও iii. কাব্যিক।

২. গঠন অনুসারে অনুসর্গের শ্রেণিবিভাগ

গঠনের দিক থেকে অনুসর্গ দু'ধরনের হতে পারে। যথা: ক. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ খ. বিভক্তিহীন অনুসর্গ।

ক. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ কাকে বলে

যেসব অনুসর্গে কোনো ধরণের বিভক্তি থাকে তাদের কে বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ বলে। অধিকাংশ নাম অনুসর্গ 'এ' বিভক্তিযুক্ত। 

যেমন : আগে ওপরে, কাছে, কারণে, জন্যে, নিকে, পাশে, সামনে, সম্মুখে। ক্রিয়া অনুসর্গলোও ইয়া - এ' বিভক্তিযুক্ত। যেমন: করে চেয়ে, থেকে, দিয়ে, লেগে হতে (হইতে জাত)। কোনো কোনো ফারসি অনুসর্গ 'এ' বিভক্তিযোগে গঠিত। যেমন: বদলে, বাদে।

খ. বিভক্তিহীন অনুসর্গ কাকে বলে

যেসব অনুসর্গে বিভক্তি থাকে না তাদেরকে বিভক্তিহীন অনুসর্গ বলে। কিছু অনুসর্গ গঠনের দিক থেকে বিভক্তিহীন। 

যেমন: অপেক্ষা, অবধি কর্তৃক, ছাড়া, দ্বারা, নাগাদ, পর্যন্ত, প্রতি, বিনা, ব্যতীত, মতো। অধিকাংশ ফারসি অনুসর্গ বিভক্তিহীন। যেমন: দরুন, বনাম বরাবর বাবদ।

অনুসর্গ ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য

অনুসর্গ

১. অনুসর্গের আলাদা অর্থ আছে। যেমন: দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক

২. অনুসর্গ আলাদা ভাবে বসে। যেমন: গাছ থেকে ফল পড়ে।

৩. অনুসর্গ শব্দের পূর্বেও বসে। যেমন: বিনা স্বদেশি ভাষা মিটে কী আশা?

৪. অনুসর্গ ক্রিয়ার কাল চিহ্নিত করতে পারে না। যেমন: জিয়ান অপেক্ষা ফাহিদের বড়

বিভক্তি

১. বিভক্তির নিজস্ব অর্থ নেই। যেমন: তে, এ, য়, র ইত্যাদি

২. বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। আলাদা বসে না। যেমন: বনে বাঘ আছে

৩. বিভক্তি শব্দের শেষে বসে। যেমন: বৃষ্টিতে ভিজে গেল।

৪. বিভক্তি করাক ও ক্রিয়ার কাল চিহ্নিত করে। যেমন: ফাহিম বনে গিয়েছিল।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি অনুসর্গ কাকে বলে উদাহরণসহ বিস্তারিত তোমার সফলতায়  অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...

 আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন